December 31, 2025, 7:38 pm

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন পাঁচজন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য। নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, এতে ভোটারদের একটি বড় অংশ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো এই চিঠিতে সই করেন হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির র্যাংকিং মেম্বার গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বিল হুইজেঙ্গা, একই উপকমিটির র্যাংকিং মেম্বার সিডনি কামলাগার-ডোভ, এবং কংগ্রেসম্যান জুলি জনসন ও টম আর সুওজি। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে আইনপ্রণেতারা বলেন, জাতীয় সংকটের সময়ে অন্তর্র্বতী সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ায় তারা প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকার প্রতি সমর্থন জানালেও, একটি বড় রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত করা মৌলিক মানবাধিকার এবং ব্যক্তিগত অপরাধ দায়বদ্ধতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান সরকার অথবা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আহ্বান এমন এক সময়ে এলো, যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের জানুয়ারির ভোটে নির্বাচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেয়। পূর্ববর্তী নির্বাচনের দুই বছর পর আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এসব ঘটনার প্রকৃত জবাবদিহি নিশ্চিত করা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন হওয়া উচিত; প্রতিশোধের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা নয়।
২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি উল্লেখ করে কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সম্মিলিত নয়, বরং ব্যক্তিগত অপরাধ দায়বদ্ধতার নীতি মৌলিক মানবাধিকার। আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধী বা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের বদলে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত এসব নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যালটের মাধ্যমে জনগণের মতামত শান্তিপূর্ণভাবে প্রকাশের সুযোগ দিতে নির্বাচন আয়োজনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। একই সঙ্গে সততা, স্বচ্ছতা ও নির্দলীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত রাখা বা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনরায় চালু করা এসব লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও তারা সতর্ক করেন।
চিঠির শেষাংশে কংগ্রেস সদস্যরা জোর দিয়ে বলেন, একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত।